স্বাস্থ্য ডেস্ক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: সোমবার , ২৯ সেপ্টেম্বর , ২০২৫
দেশে হৃদ্রোগে যত মানুষ মারা যাচ্ছেন, তাদের অর্ধেকেরও বেশি মৃত্যুর পেছনে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কার্ডিওভাসকুলার রোগে প্রতিবছর মারা যান প্রায় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮০০ মানুষ। এর মধ্যে ৫২ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘গ্লোবাল হাইপারটেনশন রিপোর্ট’-এ উচ্চ রক্তচাপকে হৃদ্রোগের প্রধান ঝুঁকির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ নিয়ে রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এর মধ্যে অর্ধেকই জানেন না তারা এ রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসা নিচ্ছেন মাত্র ৩৯ শতাংশ, আর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ রোগীর।
ওয়েবিনারটি আয়োজন করে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান)। এতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধের প্রাপ্যতা ও সচেতনতা বাড়ানো গেলে হৃদ্রোগজনিত মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।”
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল শাফি মজুমদার বলেন, দীর্ঘদিন রক্তচাপ বেশি থাকলে হৃদ্পিণ্ডের পেশি মোটা হয়ে কার্যক্ষমতা হারায়, পাশাপাশি রক্তনালি সরু হয়ে রক্তপ্রবাহ কমে—ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
ওয়েবিনারে ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক মলয় কান্তি মৃধা জানান, দেশে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার কম। আবার অঞ্চলভেদে ঢাকায় এর প্রাদুর্ভাব সর্বাধিক, ময়মনসিংহে সর্বনিম্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, উচ্চ রক্তচাপ কমানোর দুটি প্রধান উপায় হলো— নিয়মিত ওষুধ সেবন ও স্বাস্থ্যকর জীবনাচার। এর মধ্যে ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান ত্যাগ, নিয়মিত ব্যায়াম ও পরিমিত লবণ গ্রহণ অন্তর্ভুক্ত।
ডব্লিউএইচও প্রতিবেদনে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও দক্ষিণ কোরিয়া-কে সফল দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে সিলেটে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু হওয়া উদ্যোগ বর্তমানে ৩১০টি উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়েছে। সফলতার পেছনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সুশাসন ও কৌশলগত অর্থায়নকে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।